Header Ads

Header ADS

শিক্ষার স্বরূপ বর্ণনা করুন।

প্রশ্ন: শিক্ষার স্বরূপ বর্ণনা করুন।

উত্তর : শিক্ষার স্বরূপ : "শিক্ষা" শব্দটির উৎপত্তি সংস্কৃত 'শাস' ধাতু থেকে যার অর্থ শাসন করা, নিয়ন্ত্রণ করা, নির্দেশনা দেওয়া, শৃঙ্খলিত করা। বিদ্যা শব্দটিও শিক্ষার সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিদ্যা শব্দটি বিদ্ ধাতু থেকে উৎপন্ন যার অর্থ জানা বা জ্ঞান আহরণ করা। সুতরাং বোঝা যায় বুৎপত্তিগত অর্থ অনুসারে 'শিক্ষা' ও 'বিদ্যা' শব্দ দুটো বিশেষভাবে শিক্ষাদানের কৌশল বা জ্ঞান আহরণের ক্রিয়াকে প্রকাশ করছে। অভিধানে শিক্ষা শব্দের অর্থ নেওয়া আছে অভ্যাস, শেখা বিদ্যাভাস, অধ্যয়ন, চরিত্রোন্নতি। শিক্ষা বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে উৎপত্তিগত ও অভিধানগত উভয় অর্থই সংকীর্ণ। শিক্ষার ইংরেজি প্রতিশব্দ 'Education'। এই শব্দটির উৎপত্তি বিচার করতে গিয়ে ভাষাবিদেরা তিনটি মত প্রকাশ করেছেন। (১) কারো মতে Education এই শব্দটির উৎপত্তি লাতিন শব্দ Educare থেকে যার অর্থ প্রতিপালন করা বা পরিচর্যা করা। (২) আবার কেউ মনে করেন অন্য একটি লাতিন শব্দ Educere থেকে এটির উৎপত্তি যার অর্থ নিষ্কাশন করা বা নির্দেশনার মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। তৃতীয় মত অনুযায়ী এটির উৎপত্তি হয়েছে আরেকটি ল্যাটিন শব্দ Educatum থেকে যার অর্থ শিক্ষাদান করা বা teaching। সুতরাং দেখা যাচ্ছে Education শব্দটির বুৎপত্তিগত অর্থ


অনুসারে প্রতিপালন করা, নির্দেশনা দেওয়া বা শিক্ষাদান করা ইত্যাদি কাজের প্রতিই নির্দেশ করছে। নিত্যদিনের নানা প্রয়োজনে আমরা নিরন্তর আমাদের চারপাশের জগতের নানা ব্যক্তি ও বস্তুর সঙ্গে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ায় লিঙ হই। এতে আমাদের অভিজ্ঞতার সঞ্চয়ন ঘটতে থাকে আর ঘটতে থাকে আচরণের পরিবর্তন। অভিজ্ঞতার সঞ্চয়ন সবসময় আমাদের জ্ঞাতসারে ঘটে না, অজ্ঞাতসারেও আমাদের মনে নানা অভিজ্ঞতার ছাপ পড়ে এবং তার মাধ্যমেও আমাদের আচরণ পরিবর্তিত, পরিমার্জিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। অজ্ঞাতসারেই হোক অথবা জ্ঞাতসারেই হোক পরিবেশ থেকে অভিজ্ঞতা লাভের মাধ্যমে আমরা যা শিখছি তা আমাদেরকে কেউ প্রত্যক্ষভাবে শেখাচ্ছে না। একে আমরা অপ্রত্যক্ষ শিক্ষা বলতে পারি।


তবে এভাবে পরিবেশ থেকে সংগৃহীত অভিজ্ঞতা সবসময় আশানুরূপ আচরণিক পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হয় না। মানব সমাজ যুগ যুগ ধরে যে সব জ্ঞান সঞ্চয় করে চলেছে তা সব ক্ষেত্রে আকস্মিকভাবে পাওয়া নয়। এ জন্য পরিকল্পিতভাবে অনুকূল পরিবেশ ও ক্ষেত্র তৈরি করতে হয়। আকস্মিক ও অপরিকল্পিত উপায়ে যে অভিজ্ঞতা অর্জিত হয় ও তার ফলে আচরণের যে পরিবর্তন ঘটে তা সবসময় সমাজ অনুমোদিত ও বাঞ্ছিত নাও হতে পারে। বরং এ ধরনের অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীর প্রকৃত জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে দেখা যায়। তাই বাঞ্ছিত আচরণ অনুশীলনের জন্য সমাজ গড়ে তুলেছে নানা প্রতিষ্ঠান। অনভিজ্ঞ নবীন প্রজন্ম যাতে সমাজ নির্দিষ্ট পথে তার আচরণ সংগঠন ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সেই দিকে লক্ষ রেখে শেখা ও শেখানোর ব্যবস্থা করে হয়ে থাকে এইসব প্রতিষ্ঠানে। এই ধরনের ব্যবস্থাকে আমরা বলতে পারি। প্রত্যক্ষ শিক্ষা। অবশ্য মানুষের শিক্ষা প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষ উত্তর ভাবেই ঘটতে থাকে। তবে আচরণের পরিবর্তন অপেক্ষাকৃত স্থায়ী না হলে তাকে শিক্ষা বলা যায় না ।


সুতরাং শিক্ষাকে বলা যায় বাজির উপর পরিবেশের সেই সব প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষ প্রভাব যা তার আচরণিক অভ্যাস। দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তায় স্থায়ী পরিবর্তন আনে। এটি একটি প্রক্রিয়া যা জীবনের প্রথম দিন থেকে শুরু হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত অবিরাম ভাবে চলতে থাকে। এই প্রক্রিয়াই ব্যক্তিকে নিত্যনতুন অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তার সতত পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে সুষ্ঠুভাবে সঙ্গতি বিধান করতে সাহায্য করে এবং শুধু সঙ্গতি বিধান নয়, প্রয়োজন হলে পরিবেশকে নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন করতে বা গড়ে নিতেও সমর্থ করে। শিক্ষা ব্যক্তিকে যেমন তার সমাজের প্রতি বিভিন্নমুখী কর্তব্য ও দায়িত্ব পালনে সমর্থ করে তেমনি তার অভ্যন্তরীণ সম্ভাবনাগুলোকে পূর্ণমাত্রায় বিকশিত করে তার নিজের ও সমাজের অন্যান্য ব্যক্তির জীবনে স্থায়ী মঙ্গল বিধান করে।

ليست هناك تعليقات

يتم التشغيل بواسطة Blogger.